বিশেষ প্রতিবেদন:
আমফান চলে যাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। দক্ষিণবাংলার চারদিকে শুধু ধ্বংসের ছবি। আর থেকে থেকে খবর আসছে মৃত্যুর। এখনও পর্যন্ত ৭২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। শুক্রবারই কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আকাশপথে বিপর্যস্ত বাংলার গতিপ্রকৃতি দেখবেন তিনি। হেলিকপ্টারে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ঘোরার সময় তাঁর সঙ্গে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৃহস্পতিবার সকালেই আমফানের বিপর্যয় এবং মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে নিজের সমবেদনার কথা জানিয়ে টুইট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তার পর এদিন সকালেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আবার ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি জানান, এই সময়ে বাংলার পাশে পুরোপুরিই থাকবে কেন্দ্র। বাংলাকে সবরকম সাহায্য করা হবে। এর পর এদিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে জানান, বাংলার অবস্থা দেখে যাওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী এ কথা জানানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কলকাতায় আসছেন। এসেই তিনি রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে আমফান বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা করবেন। শুক্রবার বেলা সওয়া দশটা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামার কথা প্রধানমন্ত্রীর। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে চলে যাবেন সোজা বসিরহাটে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকেই তাঁর সঙ্গে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও আমফানের দংশন থেকে রেহাই পায়নি বিমানবন্দরও। ঝড়ের পর থেকেই বিমানবন্দর জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
আকাশপথে তাঁরা দুই ২৪ পরগনা ঘুরে দেখবেন। সম্ভব হলে সন্দেশখালি এবং হিঙ্গলগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামানো হবে। যদি তা সম্ভব হয়, তা হলে তিনি সেখানকার দুর্গত মানুষের সঙ্গে কথাও বলবেন। বসিরহাটেই প্রধানমন্ত্রী সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। তার পর হেলিকপ্টারেই বসিরহাট থেকে সোজা কলকাতা বিমানবন্দরে চলে যাবেন। সেখান থেকেই দিল্লি ফেরার কথা তাঁর। উল্লেখ্য, বুধবারই সুপার সাইক্লোন আমফান আছড়ে পড়ার পর থেকে গোটা দক্ষিণবাংলা ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে পড়ে রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসেব করা এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে রাজ্য সরকারের তরফে সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলায় ১ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি করেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্যের সমস্ত দলই এই ঘটনাকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ বলে ঘোষণা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।
বুধবার আমফান আছড়ে পড়ার পর থেকে দক্ষিণবাংলার জেলাগুলিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেই যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। সব জায়গাতেই বহু টাওয়ার ভেঙে পড়ায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত। ফলে বহু পরিবারই তাঁদের নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারছেন না। তাঁরা কে কেমন আছেন, তা জানা সম্ভব হচ্ছে না। এই ঘটনা আরও চিন্তা বাড়িয়েছে সরকারের। এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে আমফান–বিপর্যয়ে ৭২ জনের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃতদের মধ্যে কলকাতার ১৫ জন রয়েছেন। এ ছাড়া হাওড়ার ৭ জন, উত্তর ২৪ পরগনার ১৭ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৮ জন, পূর্ব মেদিনীপুরে ৬ জন, নদিয়ায় ৬ জন, হুগলিতে ২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
মৃতদের পরিবারকে রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ বাবদ আড়াই লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত পুরোপুরি রাজ্যের পাশে দাঁড়ানো। দেখা যাক কী হয়! তবে সূত্রের খবর, এখনও জেলাগুলি থেকে পুরো রিপোর্ট আসেনি। তাই এই বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।